বিশেষণ

 

বিশেষণ

      সংজ্ঞা:

      বাংলা ব্যাকরণ মতে– বাক্যে ব্যবহৃত যে প্রকার পদ বিশেষ্য, সর্বনাম ও ক্রিয়াপদকে বিশেষিত করে, তাকেই বিশেষণ বলে। 
বিশেষ্যের বিশেষণ - লাল রক্ত;
সর্বনামের বিশেষণ - করুণাময় তুমি;
ক্রিয়ার বিশেষণ - আস্তে যাও

 

শ্রেণিবিভাগ:

      বিশেষণ দুইভাগে বিভক্ত, নাম বিশেষণ এবং ভাব বিশেষণ

ক)নাম-বিশেষণ:

যে সকল শব্দ (বিশেষণ পদ) সর্বনাম ও বিশেষ্যকে বিশেষিত করে, তাকেই নাম বিশেষণ বলা হয়। যেমনঃ সুস্থ সবল দেহকে কে না ভালোবাসে? সে রূপবান ও গুণবান।

খ)ভাব বিশেষণ:

যে সকল শব্দ বাক্যের বিশেষ্য বা সর্বনাম পদ ব্যতীত অন্যপদগুলোকে বা বাক্যকে বা উভয়ের অর্থকে বিশেষিত করে, তাকে ভাব-বিশেষণ বলে। ভাব বিশেষণকে চারভাগে ভাগ করা যায়-

) ক্রিয়া বিশেষণ

) বিশেষণের বিশেষণ

) অব্যয়ের বিশেষণ

) বাক্যের বিশেষণ 

) ক্রিয়া বিশেষণঃ

যে পদ ক্রিয়া সংঘটনের ভাব, কাল বা রূপ নির্দেশ করে, তাকে ক্রিয়া বিশেষণ বলে। যেমন- পরে একবার এসো। ক্রিয়া বিশেষণের বিভিন্ন ধরনের গঠন নিন্মেরূপ-

  • বিভক্তিহীন শব্দযোগেঃ ভাবজ্ঞাপক - সে অবশ্য আসবে। সময়জ্ঞাপক - ক্রমাগত ভুল করো না। স্থানবাচক - হেথা আর এসো না।
  • এ-বিভক্তি যোগেঃ সুখে থাকতে চাই। পরিস্থিতি চরমে উঠেছে।
  • -পূর্বক, -ভাবে -রূপে, -সহকারে, সহিত, সাথে সমাসবদ্ধ হয়ে নতুন ধরনের ক্রিয়া- বিশেষণ তৈরি হয়। যেমনঃ যত্নপূর্বক কাজটি করো। এরূপ- ভালোভাবে, ভালোরূপে, মনোযোগ-সহকারে, আদবের সহিত, আদবের সাথে।
  • তঃ, থা, ধা, শ, বত্, মত, মতন প্রত্যয়ান্ত শব্দ বিশেষণ হয়। যেমনঃ তঃ - সম্ভবতঃ তিনি আসবেন। ধা - জলস্রোতটি শতধায় বিভক্ত। - ক্রমশ বিষয়টি পরিষ্কার হলো। ত্র - ঈশ্বর সর্বত্র বিরাজমান। মত - ঠিকমত কাজ করো। মতন - ঠিকমতন কাজ করো।
  • করে - অসমাপিকা ক্রিয়াপদ যোগে: ভালো করে জেনে আস
  • মাত্র - যোগে: ট্রেনটি চলামাত্র সে ঘুমিয়ে পড়লো
  • শব্দ - দ্বৈতে: ধীরে ধীরে সাপটি চলে গেল 

) বিশেষণের বিশেষণ:

যে পদ নাম বিশেষণ অথবা ক্রিয়া বিশেষণকে বিশেষিত করে, তাকে বিশেষণের বিশেষণ বলে। যেমনঃ সামান্য একটু দুধ দাও। রকেট অতি দ্রুত চলে।

)অব্যয়ের বিশেষণ:

যে ভাব-বিশেষণ অব্যয়পদ অথবা অব্যয় পদের অর্থকে বিশেষিত করে তাকে অব্যয়ের বিশেষণ বলে। যেমনঃ ধিক্ তারে শত ধিক্ নির্লজ্জ যে জন।

)বাক্যের বিশেষণ:

বিশেষণের খনো কখনো কোনো বিশেষণ পদ একটি সম্পূর্ণ বাক্যকে বিশেষিত করতে পারে তখন তাকে বাক্যের বিশেষণ বলা হয়। যেমন—দুর্ভাগ্যক্রমে দেশ আবার নানা সমস্যাজালে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে।

 

গঠনরীতি:

কয়টি শব্দের মাধ্যমে বিশেষণটি তৈরি হতে পারে, তার উপর ভিত্তি করে বিশেষণকে দুটি ভাগ ভাগ করা যায়।

)এক পদময় বিশেষণ:

এটি মৌলিক বিশেষণ (একটির বেশি শব্দ নিয়ে তৈরি নয়): ছোট মাছ অল্প জলেতে লাফায় বেশি।

  • কৃদন্ত প্রত্যয় দ্বারা তৈরি বিশেষণ : চলন্ত বাস থেকে লাফিয়ে নামলেন।
  • তদ্ধিত প্রত্যয় দ্বারা তৈরি বিশেষণ : শক্তিমান পুরুষ।
  • বিভক্তি যুক্ত বিশেষণ : ঘাটের মরা।
  • উপসর্গযুক্ত বিশেষণ : প্রখর রৌদ্র। (প্র উপসর্গ যোগে প্রখর।)

)বহুপদী বিশেষণ:

এটি একাধিক পদ দ্বারা গঠিত বিশেষণ। এক্ষেত্রে পদগুলো পৃথকভাবে সজ্জিত থাকতে পারে, কিম্বা সমাস বা সন্ধিযোগে যুক্ত অবস্থায়ও থাকতে পারে।

  • পদ পৃথক অবস্থায় : দশ দিনের পথ।
  • সন্ধি বা সমাস-সিদ্ধ অবস্থায় : ক্ষুধাতুর শিশু চায় না স্বরাজ, চায় দুটো ভাত একটু নুন।

 

 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ভাষাবিজ্ঞান

ক্রিয়াপদ

কবিতার সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য